সমাজের সমালোচনা কে ইতিবাচক ভাবে নেওয়ার উপকারিতা
আপনি কি মানুষের সমালোচনা নিয়ে বিরক্ত? বুঝতে পারছেন না সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে কিভাবে গ্রহণ করবেন? চিন্তা নেই, আজকের পোস্টে পেয়ে যাবেন সঠিক সমাধান।

আমরা যে যেমনই হই না কেন প্রত্যেককেই সমালোচনার শিকার হতে হয়। সবার সহ্য ক্ষমতা এক নয়। সবাই সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। হয়ত আপনার চাকরি হচ্ছেনা, মানুষ বা বাড়ির সবাই বলছে, চাকরি এত সহজ নয়। আপনাকে দিয়ে আসলে কিছু হবেনা। আবার হতে পারে, আপনি মোটা, এজন্য সবাই আপনাকে দিনরাত বলছে, আপনার বয়স বেশী মনে হয়, আপনাকে কেউ পছন্দ করবে না।
এসব কথাগুলো বেশ কিছু সময়ের জন্য আপনার মন খারাপ করে দেবে। আপনি চাইলেও এসব কথার বাইরে যেতে পারবেন না। কিন্তু আস্তে আস্তে এসব কথা থেকেই ইতিবাচক কিছু খুঁজে পেতে পারেন। যা আপনাকে নিরুৎসাহিত করার বদলে আরও উৎসাহিত করবে। কিন্তু এটা বলা যতটা সহজ, তারচেয়ে কাজে করে দেখানো অনেক কঠিন।
আমাদের আজকের পোস্টটি সাজানো হয়েছে কিভাবে সমালোচনাকে ইতিবাচক ভাবে নিবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত। পোস্টটি পড়ার পর সমালোচনায় মন খারাপ বা হতাশাগ্রস্থ হবেন না কখনোই। চলুন প্রিয় পাঠক, দেরী না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
১. আপনার কমতি জানতে পারছেন
আমরা ততক্ষন পর্যন্ত নিজেদের ঘাটতি বুঝতে পারিনা, যতক্ষন কেউ সেটা না বলে। আপনি হয়ত দিন দিন অনিয়মের ফলে চেহারার উজ্জ্বলতা, সজীবতা হারিয়ে ফেলছেন, সেটা আপনি নিজে বুঝতে পারবেন না। কিন্তু অন্যদের চোখে ঠিকই ধরা পড়বে।
তাদের সমালোচনা থেকেই জানতে পারবেন, যে আপনার অনিয়ম না কমালে চেহারা আর ঠিক হবেনা। আর প্রত্যেকটি মানুষই চায় নিজের চেহারা, ফিটনেস ঠিক রাখতে। তাই নিজের কমতি জানতে সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে নিন। বরং নিজে থেকে সমালোচনাকারীকে উদ্ধুদ্ধ করুন।
আরও পড়ুন: ফেসবুক পোস্টে বেশী লাইক কমেন্ট পাওয়ার কৌশলসমূহ
২. জিদ তৈরি করুন
যখন কেউ সমালোচনা করে তখন তার প্রতি রাগ, ক্ষোভ, দেখিয়ে বা প্রতিবাদ করে আদতে কোন লাভ নেই। আপনি এভাবে কারো মুখ বন্ধ করতে পারবেন না। বরং আপনাকে আরো বেশী সমালোচনা শুনতে হবে।
তাই যখন কেউ আপনার কমতি, দোষ, অযোগ্যতা নিয়ে সমালোচনা করবে তখন নিজের ভিতরে জিদ তৈরি করুন যে আপনি ভাল হয়ে দেখিয়ে দেবেন। সবাই যেজন্য কথা শোনায় সেই বিষয়টিতে ভাল হয়ে দেখিয়ে দিন।
৩. সবার কথায় গুরুত্ব দিবেন না
সবার প্রশংসায় যেমন আমরা সন্তুষ্ট হই না, তেমনি সবার সমালোচনাতেও বিচলিত হওয়া উচিত নয়। কারন কিছু মানুষ আপনি ভালো কাজ করলেও সমালোচনা করবে। আপনি কেন চাকরি করছেন, কেন বিয়ে করছেন না, বিয়ে করে থাকলে বাচ্চা কেন নিচ্ছেন না, বাচ্চা নিয়ে থাকলে আরও বাচ্চা কেন নিচ্ছেন না, বাচ্চা ছেলে হচ্ছেনা কেন!
এরকম হাজারো অযৌক্তিক সমালোচনা আপনাকে শুনতে হবে। তাই এগুলো গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করুন। তাদের সমালোচনাকে গুরুত্ব দিন যেটা আপনিও মনে করেন যে, সমস্যা আপনার।
আরও পড়ুন: একাকীত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার ৬ টি সেরা উপায়
৪. নিজেকে সম্মান করুন
এটাই সবচেয়ে বড় বিষয় যা করতে আমরা ভুলে যাই। আমরা অযথা অন্যের কথায় কান দিয়ে নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করে হীনমন্যতায় ভুগে থাকি। কিন্তু আপনিই সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম। আপনি চাইলেই, মন থেকে চেষ্টা করলেই যেকোন কাজ করতে পারেন।
সেই ক্ষমতা দিয়েই সৃষ্টিকর্তা আমাদের পাঠিয়েছেন। আপনি খেয়াল করে দেখুন সবার গুনাবলি সমান নয়, কিন্তু সবাইই কোন না কাজে ভাল।সবাইই জীবনে ভালবাসা পায়। কারন সবার সবাইকে পছন্দ নয়। আপনি হতে পারেন অনিন্দ্য সুন্দর। কিন্তু কোন মানুষের চোখে হয়ত আপনার সবচেয়ে অসুন্দর বন্ধুটিই ভালবাসার মানুষ। তার পৃথিবীই হয়ত তাকে ঘিরে।
সবার রুচি পছন্দ এক নয়। তাই সমালোচনার অর্থও আপনিই খারাপ, অযোগ্য এটা নয়। নিজের প্রতি সম্মান ও বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যান। জয় আপনার হবেই। আর এক্ষেত্রে সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে নিন।
৫. মোটিভেশন হিসেবে নিন
আমাদের লক্ষ্য যত বড়ই হোক না কেন সাফল্যের স্বপ্ন সবসময় আমাদের কাজের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারেনা। নির্দিষ্ট সময় পর পর আমরা কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। আর কাজের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে মনে রাখার মত ঘটনার প্রয়োজন হয়।
আপনি যখন প্রচন্ড হতাশায় ভুগবেন, কিছু করার নেই ভেবে, তখন অন্যদের সমালোচনা আপনাকে আবার কঠোর পরিশ্রমের দিকে ঠেলে দিবে। আপনি নিজের স্থবির অবস্থা কাটিয়ে উঠে আবারও নিজের লক্ষ্য পূরনে কাজে ব্রতী হবেন। এক্ষেত্রে সমালোচনাই হবে আপনার মোটিভেশন।
৬. চ্যালেঞ্জ নিন
কেউ যখন আপনার ভাগ্য, যোগ্যতা, পরিনতি নিয়ে কটাক্ষ করবে, তখন তাকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য নিজেকে চ্যালেঞ্জ দিন। যে আপনিই পারবেন। আপনি চেষ্টা করলেই সবার ধারনা বদলে দিতে পারবেন। কিন্তু কেউ না বলা পর্যন্ত এই ধরনের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মানসিকতা সবার ভিতর তৈরি হয়না।
হয়ত কেউ আপনাকে বলছে আপনি কোনদিন ধনী হতে পারবেন না। এই সমালোচনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে দেখিয়ে দিন, যে আপনি চাইলেই সম্ভব হয় ধনী হওয়া। এবং কারো ভাগ্য এবং পরিনতি নিয়ে কোন মন্তব্য করা উচিত নয়। কিন্তু এটা তখনই করুন, যখন আপনি প্রথমে সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করবেন।
আরও পড়ুন: জীবনে কোন ৫ ধরনের মানুষকে বেশি প্রাধান্য দেবেন জেনে নিন
উপসংহার
হতাশা, হীনমন্যতা, সুইসাইড করার প্রবনতা সবই মূলত আসে সমালোচনা সহ্য না করতে পারা থেকে। আমরা যখন চারিদিকের মানুষের বাকা কথাগুলোকে সিরিয়াসলি নেই, এবং তাদের কথানুযায়ী মনে করতে থাকি যে, আসলেই আমাদের দিয়ে কিছু হবেনা, তখনই আসলে আমাদের দিয়ে কিছু হয়না। আর দূর্ভাগ্যবশতঃ আমরা ভেবে নেই যে, মানুষ যা বলে আসলে ঠিকই বলে।
কেউ সমালোচনা করলে করতে দিন, বরং মাঝে মাঝে নিজে ইচ্ছা করে শুনুন। এগুলোই দিন শেষে সাফল্য পেতে টনিকের মত কাজ করবে। সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহন করা অভ্যাসের বিষয়। উপরিল্লিখিত উপায়গুলো অনুসরন করলে অবশ্যই সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে জীবনে উন্নতি করতে পারবেন।
আশা করি আজকের পোস্টটি সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে নিতে আপনাদের উপকারে আসবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার অথবা কোন মতামত দেওয়ার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা আপনার মতামত গুরুত্বসহকারে নিয়ে অবশ্যই দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।