ভারতের কয়েকটি রহস্যময় গ্রাম যা আপনি বিশ্বাস করবেন না
ভারতবর্ষের অসংখ্য স্থানে ছড়িয়ে আছে অনেক রহস্য। আজকের লেখায় তেমনি কয়েকটি রহস্যময় গ্রাম নিয়ে জানার চেষ্টা থাকছে।

এই পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে অনেক রহস্য। কৌতুহলী মানুষ সেসব রহস্যের সমাধান পেতে ছুটে চলে দূর দূরান্তে। ভারতবর্ষেও এমন কিছু গ্রাম রয়েছে যেগুলো রহস্যে ঢাকা এবং এসব রহস্যের আজ অবধি কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। চলুন জেনে নেই সেরকম কয়েকটি গ্রাম সম্পর্কে।
জাতিঙ্গা গ্রাম
জাতিঙ্গা ভারতের আসামের ডিমা হাসাও জেলার হাফলং থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরে অবস্থিত একটি রহস্যময় গ্রাম। এখানে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রকৃতি অদ্ভুত ব্যবহার শুরু করে। দলে দলে পাখিরা সব আত্মহত্যা করতে শুরু করে।
বড় বাড়ির ছাদ বা গাছ থেকে ঝাঁপ দিয়ে এমনটা করে তারা। বিজ্ঞানীদের মতামত অনুযায়ী শীতকালে কুয়াশা না দেখতে পাওয়ার কারণে তারা এই কাজ করতে পারে। কিন্তু আসলে কেন ঘটে এমন অদ্ভুত ঘটনা তা আজও এক রহস্য।
টুইন গ্রাম
ভারতের কেরালা রাজ্যের কোদিনহি গ্রামের বিশেষত্ব হলো এখানে প্রায় সবাই যমজ। তাই সবার কাছে এটি টুইন গ্রাম নামেই বেশি পরিচিত। এই গ্রামের সব দিকেই মেলে জোড়ায় জোড়ায় মানুষ। তাই এটি এখন বিশ্বের কাছেও একটি বিস্ময়কর জায়গা। এই গ্রামেই রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি টুইনের বাস।
২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী ২ হাজার বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ২২০ জোড়া টুইন রয়েছে এখানে। অথচ বিশ্বে গড়ে এক হাজার মানুষের মধ্যে এক জোড়া যমজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই গ্রামে টুইনের হার প্রায় ৪২ শতাংশ। স্বভাবতই এটি একটি বিস্ময়কর ঘটনা। এর যত ব্যাখ্যাই থাকুক না কেন, ভারতবর্ষের মানুষের কাছে এই রহস্য অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।
কুলধারা
জনমানবহীন প্রেতাত্মার গ্রাম হিসেবে পরিচিত কুলধারা গ্রামটি ভারতের রাজস্থানে অবস্থিত। ১৮২৫ সালের পর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে এই গ্রামটি। লোকের মুখে প্রচলিত কাহিনী থেকে জানা যায় যে, এই গ্রামটি একটা অভিশাপ বহন করছে। প্রায় সাতশ বছর ধরে বসবাস করার পর একদিন হঠাৎ সমস্ত গ্রামবাসী নিখোঁজ হয়েছিল। তাদের দেখা আর পাওয়া যায়নি।
প্রচলিত কাহিনী থেকে জানা যায় সেই সময় এ রাজ্যটির মন্ত্রী সেলিম সিং এই গ্রামের সর্দারের মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন। তারপর তিনি গ্রামবাসীদের বলেন, যদি মেয়েটির সাথে তার বিয়ে না দেওয়া হয় তাহলে তিনি উচ্চ হারে কর আদায় করবেন। কিন্তু তার কথা না শুনে গ্রামটির প্রধান তার মেয়ের সম্মান রক্ষার্থে সবাইকে সাথে নিয়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছিলেন।
এরপরে সেলিম সিং সেখানে নতুন করে গ্রাম বসানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কারণ সেখানে কেউ রাত কাটাতে পারতো না, সবাই মারা যেত এবং মৃত্যুর কারণও জানা যেত না। এরপর এটিকে নিয়ে অনেক রকম গল্প প্রচারিত হয়ে যায়। তবে অধিকাংশ লোক মনে করে কুলধারা গ্রামের মানুষের অভিশাপের কারণেই সেখানে আর বসতি স্থাপিত হতে পারেনি। তারা নাকি সেখানকার বাতাসে অভিশাপ ছড়িয়ে দেখা গিয়েছিল, যাতে তাদের মতো অন্য কেউ এখানে বসবাস করতে না পারে। আর সেই থেকেই পরিত্যক্ত হয়ে আছে কুলধারা গ্রামটি।
দেবমালি গ্রাম
রাজস্থানের মরুপ্রান্তরে অবস্থিত একটি গ্রাম হলো দেবমালি। পুরো গ্রামে কোথাও একটিও পাকা বাড়ি নেই। চারদিকে দাঁড়িয়ে থাকা সমস্ত ঘর মাটির তৈরি। তাদের যে পাকা বাড়ি করার সামর্থ্য নেই তেমনটা নয়। আসলে এক অদ্ভুত বিশ্বাস থেকে তারা এমনটা করে।
গ্রামের সবাই দেবতা নারায়ণের উপাসক। তাদের মধ্যে এমন বিশ্বাস রয়েছে যে, দেবতা চান না তারা দালানকোঠায় বাস করুক। কারণ একজন পাকা বাড়ি বানানোর চেষ্টা করলে তা ধসে পড়েছিল। আর এরপর থেকেই তাদের বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছে যে, তাদেরকে কুঁড়েঘরেই বসবাস করতে হবে।
অনেকে অন্য জায়গায় পাকা বাড়ি বানিয়েছেন, কিন্তু তারা এখনো দেবমালি গ্রামে কুঁড়েঘরেই বাস করেন। গ্রামের কোথাও গ্যাস বা কয়লার চুলা, এমনকি বিদ্যুতের লাইনও নেই। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই নিয়ম পালিত হয়ে আসছে।
শ্বেতপাল গ্রাম
মহারাষ্ট্রের একটি রহস্যময় গ্রাম শ্বেতপাল। এখানে মানুষ আর সাপদের অবাক করা সহাবস্থানের দেখা মেলে। এই গ্রামে মানুষ আর সাপ কেউ কারও জন্য ভীতিকর নয়। কোবরার মতো সাপও এখানে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়। এখনো পর্যন্ত এই গ্রামে কারও সাপের কামড় খাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
শিবপুর গ্রাম
মহারাষ্ট্রে অবস্থিত একটি গ্রাম শিবপুর। এই গ্রামটি সবার কাছে পরিচিত কামার আলী দরবেশ নামে একজন সুফির স্মৃতিসৌধের একটি বিশেষ পাথরের জন্য। একটি ২০০ কেজি ওজনের পাথর রয়েছে স্মৃতিসৌধটিতে। তবে এটি সরানোর জন্য কেবল একটিই পদ্ধতি আছে। ১১ জন মানুষ তাদের তর্জনী দিয়ে পাথরটি ছুঁয়ে সন্তের নাম উচ্চারণ করলে সেটি হাওয়ায় ভেসে ওঠে।
এছাড়া আর কোনো উপায়েই পাথরটি সরানো যায় না। লোকের ধারণা কামার আলী দরবেশ মন্ত্রঃপূত করে রেখেছেন এই পাথরটি। তবে ঠিক কি কারণে এমনটা হয় তা আজও এক রহস্য।
সেই প্রাচীনকাল থেকেই রহস্যাবৃত একটি ভূখণ্ড হলো ভারতবর্ষ। অনেক পুরনো ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য। যেন প্কৃতি সৌন্দর্য, বৈচিত্র্য এবং রহস্য ঢেলে দিয়ে সাজিয়েছেন এই ভূমিকে। তাই এর অমীমাংসিত রহস্যেরও কোনো শেষ নেই।