জীবনের কঠিনতম পরিস্থিতি পার হওয়ার কৌশলসমূহ
আপনি কি জীবনের কঠিনতম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন? কিভাবে এই পরিস্থিতি পার হবেন বুঝতে পারছেন না? দেখে নিন কিভাবে এই পরিস্থিতি সামলাবেন

শিরোনাম পড়ে কি অবাক হয়েছেন পাঠক? যে পরিস্থিতি যখন কঠিন হয়, তখন তা সামলানো কি এতই সহজ? মুখের কথায় এমন অনেক কিছুই বলা যায়, কিন্তু কাজে করে দেখানো যায় না, এরকম আরও অনেক কিছু, তাই নয় কি?
হ্যা, কঠিন পরিস্থিতি মানেই চারদিকে সবকিছুই তখন বিষাক্ত মনে হয়, নিজেকে খুবই তুচ্ছ, অসহায় মনে হয়। যা আমাদের মনের জোর পুরোটাই নষ্ট করে দেয়। আমাদের আর কোন ক্ষমতা থাকেনা কোন কাজ করার। এই স্থবির অবস্থার জন্য সেই কঠিন পরিস্থিতি দায়ী। কিন্তু একটি বিষয় জানেন কি? যতক্ষন বেচে আছেন, জীবন মানেই যুদ্ধ।
আমরা জানি, খুব ক্ষনস্থায়ী জীবন আমাদের। অন্যের শোক দুঃখ দেখে আমরা বিচলিত হই, সান্ত্বনা জানাই। কিন্তু আমরা নিজেরাও জানিনা পরের মূহুর্তে নিজেকে নিজেই সান্ত্বনা দেওয়ার মত পরিস্থিতি ঘটবে কিনা। তাই পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করলে মানুষ হিসেবে সবচেয়ে বড় মানসিক যোগ্যতার অধিকারী হবেন। কিন্তু তা কিভাবে করবেন?
বিপদ আসলেই তো মনের জোর চলে যায়। তখন আর কোন মোটিভেশানই কাজে আসে না, তাইত মনে মনে ভাবছেন? কঠিন পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার কিছু অব্যর্থ উপায় নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন সাজানো হয়েছে। চলুন প্রিয় পাঠক দেরী না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
জীবনের কঠিনতম পরিস্থিতি মোকাবেলা করার কৌশলসমূহ:
১. নিজের মনকে অনুসরন করুন
কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা হতাশ হয়ে যাই,দিকবিদিক জ্ঞানশুন্য আচরণ করি, কারন আমরা তখন নিজেদের মস্তিষ্ককে ভুলে যাই। আমরা যে চাইলেই নিজেদের মস্তিষ্ককে ব্যবহার করে বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে পারি তা আর মনে আসেনা।
এমতাবস্থায় কিছুক্ষন নিজের মনকে অনুসরন করুন। একেকজন মানুষ একেকভাবে নিজেদের ডিপ্রেশন কাটিয়ে থাকেন। তেমনি কঠিন বিপদে পড়লে আগে কিছুক্ষন মনের শান্তি বা স্থিতি ফিরিয়ে আনুন। তারপর ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার মত পরিবেশ সৃষ্টি হবে। কেউ বিপদে ঘুমায়, কারো প্রচুর ক্ষুধা পায়, কেউ আপনজনদের সাথে কথা বলে বা ঘোরাঘুরি করে।
তাই নিজের মনকে অনুসরন করে সাময়িক সময়ের জন্য নিজের কথা নিজে শুনুন। এটা স্ট্রেস কমাতে খুবই কাজে দেবে।
আরও পড়ুন: অনলাইন পন্যের বিক্রয় বাড়ানোর ৫ টি অব্যর্থ কৌশল
২. বিপদের মাত্রা ও ফলাফল অনুমান করুন
আপনি যে কঠিন পরিস্থিতিতে আছেন, তার ফলে আপনার কি কি ক্ষতি হয়েছে? তার ফলে আর্থিক, মানসিক, সামাজিক কি কি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন আপনি? এটা ভেবে দেখুন। তাহলে নতুন করে কি কি করলে সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে তার একটি দিকনির্দেশনা পাবেন।
যেমন অগ্নিকান্ডে ঘর বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেলে আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমানের উপর আর্থিক ক্ষতিপূরন বা বীমার টাকা দেয়া হয়।
৩. আপনজনদের পাশে রাখুন
বিপদে একা একা যা খুশি তাই করা উচিত নয়। এ সময় ভুল করার সম্ভাবনা খুব বেশী থাকে। তাই নিকটজনদের পাশে রাখুন। তারা সঠিক পরামর্শ আর সহায়তা করে আপনাকে বিপদ থেকে উত্তরনের পথ বলে দেবে। আর পরিবার, ববন্ধু-বান্ধব, এরা আমাদেরকে যতটা সাহস দিতে পারে, তারচেয়ে বেশী কেউ দিতে পারবে না।
তবে যদি পরিবার বা বন্ধুদের পাশে না পান, পরিচিত কেউ, অথবা সাইকিয়াট্রিস্ট এর সহায়তা নিন। কিন্তু বিপর্যস্ত মানসিকতা নিয়ে একা থাকবেন না।
৪. নতুন করে শুরু করুন
সম্পর্কে বিচ্ছেদ হোক বা ব্যবসায়ে লস, চাকরি চলে যাক বা সম্মানহানি, যেকোন কিছু হলে মাথা ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত কিছুদিন সময় নিন। তারপর ভেবে দেখুন নির্জীব হয়ে বসে থাকলে সমস্যার কোন সমাধান হবেনা৷ তাই সমাধানের উপায় ভাবুন। সম্পর্ক যদি টিকিয়ে রাখার মত হয়, তাহলে নিজের ভুল খুজে মান অভিমানের পালা শেষ করুন৷
যদি একেবারেই না ফেরার চিন্তা থাকে তাহলে একা থাকার মুক্তি ও সুখটা উপভোগ করুন। ভুল সম্পর্কে পরাধীন ও আত্মসম্মানহীন হয়ে বাচার চেয়ে নিজের মত সম্মান নিয়ে বাচা ভাল। ব্যবসায়ে ক্ষতি হলে ক্ষতির পরিমান নিয়ে হা হুতাশ না করে তা পুনরায় উদ্ধারের জন্য নতুন করে কাজ শুরু করুন।
অনেক সময় সব কিছু শেষ হয়ে যায়, তখন নিজেকে সামলানো দায় হয়ে পড়ে। কিন্তু ভেবে দেখুন নিজেকে দুঃখী করে বসে থাকলে কিন্তু সমাধান আসবে না। ক্ষতিপূরন করতে চাইলে আবার নতুন করে ব্যবসায় শুরু করতে হবে। তেমনি পরীক্ষায় ফেল করলেও আবার নতুন করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে।
আরও পড়ুন: আকর্ষণীয় ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করতে চান? দেখে নিন সম্পূর্ণ কৌশলসমূহ
৫. সৃষ্টিকর্তাকে স্মরন করুন
যিনি আমাদের তৈরি করেছেন তার পরিকল্পনা আমাদের পরিকল্পনার চেয়ে হাজারগুনে ভাল। তাই যা ঘটেছে মেনে নিতে কষ্ট হলেও সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখুন। তিনি সব ঠিক করে দেবেন। নতুন ভাবে শুরু করুন, আর নিয়মিত প্রার্থনা করুন। সৃষ্টিকর্তার উপর অগাধ বিশ্বাস আপনার স্ট্রেস, হতাশা কমিয়ে আপনাকে আত্নবিশ্বাসী হতে সাহায্য করবে।
৬. নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন
মানুষ তখনই কঠিন পরিস্থিতিতে কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলে যখন তার নিজের প্রতি বিশ্বাস চলে যায়। আর মনে হতে থাকে আমাকে দিয়ে আর কিছু হবেনা, যে ই পারুক। আমি আর কিছু গড়তে পারব না। আর এটাই কঠিন পরিস্থিতির সবচেয়ে ভয়াবহ দিক। যে এটা নতুন করে শুরু করার বিশ্বাস নষ্ট করে দেয়।
কিন্তু আপনি কৌশল অনুযায়ী কাজ করলে যে সবই করতে পারবেন, তা বিশ্বাস করুন। কে কি বলল তা নিয়ে চিন্তিত হবেন না। আবার যখন পরিশ্রম করে ভাগ্য বদলাতে ব্রতী হবেন, তখন আর কোন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হবেন না।
আরও পড়ুন: ইউটিউবে যে ধরনের ভিডিওগুলো বানিয়ে অল্প সময়ে ধনী হতে পারেন
উপসংহার
কঠিন পরিস্থিতি মানেই ভয়াবহ বিপদ।।আর বিপদে পড়ার কথা কেউ ভাবেনা। এটা জীবনে হঠাৎ চলে আসে। এ থেকে মুক্তির উপায় নেই। কেউই কঠিন পরিস্থিতি এড়াতে পারেনা। কারন ভবিষ্যত অনিশ্চিত। তাই পরিস্থিতিতে না ঘাবড়ে উপরিউক্ত বিষয়গুলো অনুসরন করুন। অবশ্যই ভাল ফল পাবেন।
আশা করি কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বা কোন মতামত দেওয়ার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা আপনার মতামত গুরুত্বসহকারে নিয়ে অবশ্যই দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।