চুলের যত্নে ডিমের দারুন কিছু ব্যবহার ও প্যাক

ডিম চুলের জন্য ঠিক কতটা উপকারিতা আমরা সকলেই জানি। চুলকে পূর্বের তুলনায় দীর্ঘ ও সিল্কি বানানোর জন্য অনেকে মাথায় ডিম ব্যবহার করে থাকে। তবে আমরা যে শুধু চুল ভালো রাখতে ডিমের ব্যবহারের প্রচলন আছে তার সম্পর্কেই জানে কিন্তু ঠিক কিভাবে ডিম চুলে ব্যবহার করলে চুল ভালো থাকে সে সম্পর্কে কি আমাদের ভালো ধারণা আছে? ডিমের এই  পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকে জেনে থাকবেন আবার অনেকে জেনে থাকবেন না।

চুলের যত্নে ডিমের দারুন কিছু ব্যবহার ও প্যাক
চুলের যত্নে ডিমের দারুন কিছু ব্যবহার ও প্যাক

 
ডিম চুলে ব্যবহার করে কিভাবে উপকার পাওয়া যায় তা জানেন কি? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

ডিম  আমিষ জাতীয় একটি খাদ্য। এটি খাওয়ার ফলে শরীরে যত রকমের উন্নতি সাধন হয় ঠিক সেভাবেই যদি এর পুষ্টিগুণ গুলোকে কাজে লাগিয়ে চুলে ব্যবহার করা হয় তবে তা চুলের জন্য বেশ ভালো পরিণতি হয়ে দাঁড়ায়।  আমরা অনেকেই দেখি চুলে ডিম ব্যবহার করতে। তবে তারা ঠিক কেন  এবং কিভাবে ডিম ব্যবহার করছে এটা আপনারা জানেন কি?


আসলে ডিম হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণে ভরপুর। ডিমে রয়েছে প্রোটিন, মিনারেল এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এত গুণ সম্পন্ন পুষ্টির পরিমাণ থাকার কারণে ডিম যখন চুলে লাগানো হয় তখন  চুলের ব্যাপক উন্নতি সাধন হয়। ডিম ব্যবহারের ফলে চুলে পুষ্টি পায় এই পুষ্টিগুণ গুলো বিশেষ করে বায়োটিন এবং অন্যান্য ভিটামিন বি কমপ্লেক্স চুলের গোড়া আগের তুলনায় মজবুত করে, চুলের হঠাৎ করে ঝরে পড়া ঝামেলা দূর করে।


শুধু তাই নয় ডিমের ব্যবহার চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। একই সাথে চুলের ঘনত্ব বাড়িয়ে চুলকে পুরু করে তোলে। ডিমে থাকা প্রোটিন অংশটি চুলকে মজবুত করতে সাহায্য করে আর এই ডিমের ফ্যাট চুলকে কন্ডিশন করে পুনর্গঠন উন্নতি করে ফেলে। যার ফলে চুল দেখা ঝলমলে ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।



ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কিত তথ্য না হয় জানলেন। চুলে ডিমের কি কি প্রভাব পড়ে সে সম্পর্কেও না হয় জানতে পারলেন।


তবে আপনার জন্য ডিমের কোন অংশটা ভালো সেটা আপনি বুঝবেন কি করে?

আসলে চুলের গঠনের উপাদান এর উপর ভিত্তি করে ডিমের সাদা অংশ না কি কুসুম আপনার জন্য ভালো সেটা আপনাকে বুঝে নিতে হবে। সাধারণত  প্রাকৃতিক ভাবে তৈলাক্ত চুলের মানুষেরা ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এর কারণ রয়েছে। ডিমের সাদা অংশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন। ডিমের সবথেকে বেশি প্রোটিন এই সাদা অংশটিতেই থাকে। এছাড়া এখানে রয়েছে কিছু মিনারেল যারা প্রত্যেকেই চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।


তৈলাক্ত চুলের অধিকারী নারীরা ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করতে পছন্দ করে। এর মূল কারণ হচ্ছে ডিমের সাদা অংশ  চুলের প্রাকৃতিক তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে এবং চুলে পুষ্টি যোগায়। তবে এখানে বলে রাখা ভাল, ডিমের সাদা অংশ চুলে ব্যবহারে কোনো রকমের কন্ডিশনিং কাজ হয় না।
 


আবার অন্যদিকে ডিমের কুসুম প্রোটিনসমৃদ্ধ। তবে ডিমের সাদা অংশ থেকে কম। এতে আবার রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যা চুলের খাবার হিসেবেই পরিচিত।  ডিমের কুসুমে রয়েছে চর্বি জাতীয় বস্তু যার ফলে চুলে কন্ডিশনার করার ক্ষমতা এর আছে। আর ডিমের কুসুমের এই কন্ডিশনিং ক্ষমতায় থাকার কারণেই শুষ্ক চুলের নারীরা ডিমের কুসুম অর্থাৎ হলুদ অংশটাকে বেশি ব্যবহার করে থাকেন।

 


তবে যাই হোক, শুধু ডিম চুলে ব্যবহার না করে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ডিমের সাথে কিছু উপাদান মিশিয়ে ডিমের কিছু হেয়ার প্যাক তৈরি করে চুলে লাগালে বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তো চলুন আমরা প্যাক গুলো সম্পর্কে জেনে নেই।



প্যাক  নম্বর এক

 প্রথম প্যাকটি হচ্ছে ডিম ও দই এর প্যাক

  এই প্যাকটি তৈরি করতে যা যা লাগবে

১)  একটি ডিম
২)  দই


প্রণালী

একটি পরিষ্কার পাত্রে ডিম ফাটিয়ে তার ভেতর দু চামচ দই ভালো করে মিশিয়ে অতঃপর চুলে লাগান। ভালো করে চুলে লাগানোর পর কমপক্ষে ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।  অতঃপর শ্যাম্পু দিয়ে সম্পূর্ণ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। তারপরে ফলাফল নিজেই দেখুন।


প্যাক নম্বর দুই

 ডিম, মধু ও লেবুর হেয়ার প্যাক

 এই প্যাকটি তৈরি করতে যা যা লাগবে

১)  ডিম
২)  মধু
৩)  লেবু


প্রণালী

একটি পরিষ্কার পাত্রে ডিম ফেটিয়ে নিয়ে এতে করে এক চামচ মধু ও এক চামচ লেবু দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। ভালোমতো মেশানো হলে প্যাকটিকে চুলে লাগান। এরপর ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।


এখানে বলে দেওয়া ভাল, এই প্যাকটি ব্যবহার করার আগের রাতে তেল হালকা গরম করে তারপর মাথায় মাসাজ করুন। অতঃপর পরের দিন এই প্যাকটি ব্যবহার করে ফলাফল দেখুন। আপনি নিজেই নিজের চুল দেখে অবাক হয়ে যাবেন।



প্যাক নম্বর তিন 

তিন নম্বর প্যাকটি হচ্ছে ডিম দুধ ও মধুর প্যাক

এই প্যাকটি তৈরি করতে যা যা লাগবে

১) দুটি ডিম
২) দুই চামচ পরিমাণ মধু
৩) দুই টেবিল চামচ পরিমাণ দুধ


প্রণালী

প্রথমে পরিষ্কার পাত্রে ডিম ফেটিয়ে নিয়ে এতে করে সামান্য পরিমাণ দুধ এবং সামান্য পরিমাণ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন। অতঃপর হেয়ার প্যাকটি তৈরি হয়ে গেলে চুলে ভালো করে লাগান।  কমপক্ষে ত্রিশ মিনিট চুলে আটকে দেওয়ার পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে প্যাকটি ধুয়ে ফেলুন।

 
এই প্যাকটিতে বিদ্যমান দুধের প্রোটিন চুল মজবুত করে একই সাথে এই দুধের প্রোটিন চুলে পুষ্টি যোগায়। আর মধু চুলকে মসৃণ করতে সাহায্য করে।
 এই প্যাকটি সপ্তাহে দুদিন ব্যবহার করলেই ফলাফল নিজের চোখের স্পষ্ট হয়ে উঠবে।



প্যাক নাম্বার চার

ডিম ও অলিভ অয়েলের হেয়ার প্যাক

এই হেয়ার প্যাক তৈরী করতে যা যা লাগবে

১)  দুটি ডিম
২)  দুই টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল

 
প্রণালী

প্রথমে একটি পরিষ্কার পাত্রে ডিম ফেটিয়ে নিয়ে
এর মধ্যে দুই টেবিল-চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ঢেলে ভালো মতো মিশিয়ে নিন। ভালোমতো মেশানো হয়ে গেলে সেটা চুলে এবং মাথার স্কাল্পে লাগিয়ে ফেলুন। ২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। আশা করা যায় ভাল ফলাফল পাবেন।


সুপ্রিয় পাঠক এই ছিল আজকের আলোচনা। আপনারা নিজেদের চুলের সৌন্দর্য রক্ষার্থে চুলে উপরোক্ত ডিমের হেয়ার প্যাক গুলো লাগিয়ে দেখতে পারেন। আশা করা যায় আপনি ভাল ফলাফল পাবেন। আজ তাহলে এখানেই ইতি টানছি, ধন্যবাদ।